পানিতে ভেসে গেল চাষির স্বপ্ন
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
১৩-০৭-২০২৫ ০২:০৫:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৩-০৭-২০২৫ ০২:০৫:০৩ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
টানা ৫ দিনের বৃষ্টিতে নোয়াখালীর কৃষকদের বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত ভেসে গেছে। জেলায় সাত হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় জেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি মাঠ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। কৃষকরা আউশ ধান ও আমন ধান রোপণের জন্য প্রস্তুত করা বীজতলার চারা গাছ বাঁচাতে পারেননি। ফলে আসন্ন আমন ধানের মৌসুমে ধান উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলার সদর, সুবর্ণচর, কবির হাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চাটখিল উপজেলায় টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টির পানি ধীরগতিতে নামায় এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে বলে কৃষকরা জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে সাত হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ পানিতে ডুবে যায়। এর মধ্যে আউশ ধান তিন হাজার ৫৯২ হেক্টর, আমন ধানের বীজতলা (ধানের চারা) এক হাজার ১৭৩ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি এক হাজার ৮০০ হেক্টর, শরৎকালীন শাকসবজি ৭২৫ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন টমেটো এক হেক্টর, অফসিজন তরমুজ দুই হেক্টর, মরিচ ১৬ হেক্টর, পাট দুই হেক্টর।
সদর উপজেলার চর মটুয়া ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস শহীদ বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিন একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি। ওই জমিতেই আমন চাষ করার জন্য ৩০ কেজি ধানের বীজতলা করেছিলাম। গত পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টিতে আউশ ধান ও বীজতলা ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক আশা ছিল আউশ ধান ঘরে তুলে পরিবারের খাবারের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব। ধান বেচে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ মোটানোর আশাও ছিল। কিন্তু সর্বনাশা বৃষ্টি আমার সব স্বপ্ন ভাসিয়ে দিল। এখন সংসার কীভাবে চলবে এবং ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করব সেই চিন্তায় আছি।’
অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, তার দেড় একর জমির আউশ ধান, চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে তার ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করা এই কৃষক বলেন, ‘আউশ ধান, পেঁপে ও আদা বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে আমার স্বপ্ন ভেসে গেছে।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসরিফুল হাসান বলেন, ‘উপজেলায় ৫১০ হেক্টর আমন বীজতলা, ২ হাজার ২২০ হেক্টর আউশ ধান ও ২৮০ হেক্টর শরৎকালীন শাকসবজি বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।’
সুবর্ণচর উপজেলা-কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘উপজেলায় ৫০০ হেক্টর আউশ ধান ও ৫০০ হেক্টর আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে। চরজব্বর ও চর জুবলি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতি হয়েছে।’
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেত সবুজ বলেন, ‘উপজেলার তমরুদ্দি, নলচিরা, চরকিং, সুখচর ও নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের আউশ ধান ও আমন বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে। হাতিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধের বাইরে আউশ ধান ও আমনের বীজতলা ভেসে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মীরা রাণী দাস বলেন, ‘আমরা বৃষ্টির মধ্যে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত ফসল রক্ষায় বিভিন্ন কৌশল ও পন্থা বের করার পরামর্শ দিয়েছি। গত শুক্রবার সকাল থেকে রোদ উঠেছে, আশা করা যাচ্ছে নিমজ্জিত ফসলের অনেকাংশ রক্ষা পাবে।’
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স